লা মাযহাবী শায়েখদের প্রতারণার ফাঁদে আমার সরল প্রাণ ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলা তোমাদের সরলতাকে পূঁজি করে ধর্ম ব্যবসাকারী শায়েখদের খপ্পড় থেকে তোমার দ্বীন ও ঈমানকে হিফাযত করুন!
আমার সরলপ্রাণ লা মাযহাবী বন্ধুরা! তোমরা আমাদের শত্রু মনে কর? বোকা বন্ধু আমার! আমি তোমার শত্রু নই। তোমার প্রকৃত বন্ধু। নিরেট খাটি বন্ধু। না বুঝে তুমি আমাকে শত্রু বানিয়ে দিলে।
দেখ তুমি! একটু ভেবে দেখ! তোমাকে মিসগাইটকারী শায়েখদের প্রতি অন্ধ ভক্তিটা বাদ দিয়ে চিন্তা কর!
১
কিছু স্বার্থান্বেসী শায়েখরা বলতে লাগলেনঃ হানাফীদের নামায হয় না। এদেশের মানুষ ইমাম আবু হানীফার নামায পড়ে নবীর নামায না। হানাফীদের নামাযের কোন সহীহ দলীল নাই। তাই এ নামাযের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিষোদগার ছড়াতে হবে।
ব্যস, আমার দেশের সরল কতিপয় যুবকেরা নেমে গেলেন নামায নিয়ে ঝগড়া করার জিহাদে। মসজিদ হয়ে উঠলো ঝগড়া বিবাদের মূল কেন্দ্র।
আমরা সজাগ হলাম। উলামায়ে কেরাম খুলে দিলেন লা মাযহাবী শায়েখদের মিথ্যার মুখোশ। লেখা হল ডঃ ইলিয়াস ফয়সাল সংকলিত “নবীজীর নামায” ও মুফতি গোলামুর রহমান সংকলিত “সালাতুন্নবী সাঃ” সহ অনেক কিতাব ও প্রবন্ধ। যাতে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে চমৎকারভাবে আমাদের হাজার বছর ধরে পড়া সহীহ নামাযের সহীহ প্রমাণ পেশ করা হয়।
কিন্তু শায়েখদের মুখরোচক কথার যাদুতে এখনো কতিপয় ভাইয়েরা মোহাবিষ্ট হয়ে আছেন। ছড়িয়ে যাচ্ছেন বিবাদের বিষবাষ্প শায়েখদের প্রতারণার ক্রিড়ানক হয়ে। আফসোস এসব আত্মভোলা সরল ভাইদের জন্য।
২
বাংলাদেশে ইসলাম আসার পর থেকে মাযহাব নিয়ে ঝগড়া ছিল না। আমরা এক ছিলাম।
কিন্তু লা মাযহাবী শায়েখরা তোমাকে বুঝালোঃ মাযহাব মানলে বিভক্তি আসে। মাযহাব হয়েছে সহীহ হাদীস না মানার কারণে। তাই মাযহাব মানা যাবে না।
ব্যস, শায়েখদের কথায় তুমি নেমে পড়লে বিবাদে। এলাকায় এলাকায় শুরু করলে ফিতনা। ভাই ভাইয়ের সাথে শুরু করলে ঝগড়া। অশ্লীল ও নোংরা গালি দিতেও তোমার মুখে সাধছে না।
অবশেষে আমরা তোমাদের সামনে তোলে ধরলাম সহীহ হাদীস মানলেও মতভেদ হতে পারে। তবে এর নাম বিভক্তি নয়। তোমাদের কথিত শায়েখরা ধোঁকা দিচ্ছে। দেখইনা মাওলানা আবু হাসসান রাইয়ানের লেখা “আহলে হাদীস ও সালাফী আলেমদের ইখতিলাফ” নামক বইটি। যেখানে মাওলানা রাইয়ান দেখিয়েছেন আমাদের সরলপ্রাণ যুবকদের উল্লু বানিয়ে সহীহ হাদীস মেনে একত্র হবার নামে কিভাবে ভয়ানক বিভক্তিতে জড়িয়েছে লা মাযহাবী শায়েখরা। আমরা বয়ানে ভিডিওতে দেখিয়েছি শায়েখদের প্রতারণার মুখোশ।
কিন্তু আফসোস! এখনো অনেকের ঘোর কাটছে না। শায়েখদের প্রতি অন্ধ ভক্তি প্রতারণাগুলো অনুধাবন করতে অক্ষম করে রাখছে।
৩
লা মাযহাবী শায়েখরা বলতে লাগলেনঃ আমরা আরব মানি। আরবে কোন মাযহাব নেই। যেহেতু সৌদ্শিায়েখরা মাযহাব মানে না, তাই আমরাও মাযহাব মানি না।
লা মাযহাবী সরল যুবকেরা যাচাই ছাড়াই তাদের শায়েখদের এ মিথ্যাচার বিশ্বাস করে নেমে পড়েন প্রচারণা, ঝগড়া ও বচসায়।
এবার আমরা শায়েখ ইবনে তাইমিয়া, সৌদীর সাবেক গ্রান্ড মুফতি বিন বায, ইবনে উসাইমিন, সালেহ আল ফাউজান, মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহহাব নজদীসহ আরব আলেমদের নিজস্ব কিতাব থেকে তাদের মাযহাব মানা এবং মাযহাব মানার প্রতি তাদের জোর তাগিদমূলক বক্তব্য তুলে ধরলাম। (দেখুন http://www.ahlehaqmedia.com প্রকাশিত প্রবন্ধ ও ভিডিও)
এর পরও শায়েখদের কতিপয় অন্ধ ভক্তদের দৃষ্টি খুলছে না। হায়! আমাদের এসব অবুঝ ভাইদের শায়েখদের ধোঁকার জাল থেকে বের হবার তৌফিক দান কর।
৪
লা মাযহাবী শায়েখরা বলতে লাগলেনঃ তারা সহীহ কথা বলেন। সহীহ হাদীস মানেন।
এবার বাংলার জাঁদরেল মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল মতীন দামাত ফুয়ুজুহুম লেখলেন “দলীলসহ নামাযের মাসায়েল নব সংস্করণ”
যাতে তিনি লা মাযহাবী শায়েখদের সহীহ হাদীসের নামে ঘৃণ্য জালিয়াতি, রেফারেন্স দিয়ে মিথ্যা কথা বলা শায়েখদের নোংরা চেহারা জাতির সামনে খুলে দেন।
এত জালিয়াতিকারী, এত প্রতারণাকারী, নবীর হাদীসের নামে বেনজীর মিথ্যাচারকারী আসাদুল্লাহ গালিব, অজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসফ, শহীদুল্লাহ খান, মুযাফফর, আমানুল্লাহ, আকরামুজ্জামান, মুখলেসুর রহমান, মুরাদ বিন আমজাদ, মতিউর রহমান, কাজী ইব্রাহীমদেরই সাপোর্ট দিয়ে চলছেন আমাদের কিছু সরল ভাইরা।
৫
লা মাযহাবী শায়েখরা এক সময় প্রচন্ড চ্যালেঞ্জবাজী করে বেড়াতেন। তাদের মতবাদ দলীল নির্ভর, আমাদের কোন দলীল নাই।
কিন্তু যখনি আমরা “লা মাযহাবীদের দলীলহীন মতবাদ” লেখে তাদের মতবাদকে দলীলহীন বলে প্রমাণ করলাম।
যখন আমরা লা মাযহাবী শায়েখদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানে, নিজেদের বাসায়, তাদের এলাকায় গিয়েও বিতর্কিত মাসায়েল নিয়ে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব করলাম, তখন শায়েখরা চুপ মেরে গেলেন। বসার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখালেন না।
কারণ সামনা সামনি বসেতো রেফারেন্সের জালিয়াতি করা যাবে না। একজনের নামের বদনাম আরেক জনের নামে চালানো যাবে না। তাই এসব শায়েখরা নিজেদের ভরা কলস দাবী করলেও সরাসরি নিজের বাসায় বসার ও সাহস প্রদর্শন করতে পারেন না।
কিন্তু তবু আমাদের কতিপয় সরল ভাইয়েরা এসব শায়েখদের প্রতারণা ধরতে পারছেন না। এসব শায়েখদের অন্ধ ভক্তরা শায়েখদের প্রতি অগাধ ভক্তির জোরে মুখোমুখি আলোচনায় বসতে আগ্রহী হলেও শায়েখরা রাজি নয়। কারণ শায়েখরা জানে তাদের ভরা কলসীতে কি আছে? কিন্তু আমাদের সরল ভাইরা এসব শায়েখ সম্পর্কে বরাবরই অজ্ঞ থেকে যাচ্ছেন। সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন চোখ বন্ধ করে। এসব যুবকদের দ্বীন ঈমানের দুশমন এসব শায়েখদের বানালেন গলার মালা। আর তাতের প্রকৃত কল্যাণার্থী আমাদের মনে করতে লাগলেন দুশমন। ব্যস, ছুটিয়ে দিলেন আমাদের বিরুদ্ধে নোংরা ও অশ্লীল গালির থুবরী। এসব গালি ভাইদের আমলনামায় সহীহ হাদীস অনুসরনের সওয়াব লিখাচ্ছে নাকি গোনাহ লিখাচ্ছে তা ভাবার মত হিতাহিত জ্ঞান পর্যন্ত লোপ পেয়েছে ভাইদের মস্তিস্ক থেকে।
ভাই আমার! বন্ধু আমার! তুমি আমাদের শত্রু নও। আমাদের ভাই। কতিপয় ব্যক্তির প্রতি অন্ধ ভক্তির কারণে তুমি বন্ধুকে শত্রু মনে করার মত ভুল করো না। তুমি আমাকে শত গালি দিলেও, হত্যার হুমকি দিলেও আমি তোমার জন্য বদদুআ করবো না। কারণ আমি জানি তুমি ভাল মানুষ। তুমি নির্দোষ। তুমি শায়েখদের স্বার্থের ফাঁদে প্রতারিত। তাই তোমাকে আমি কখনোই বদদুআ করি না, করবোও না কোনদিন ইনশাআল্লাহ। দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি সফলকাম হও অধমের পক্ষ থেকে এ দুআ সর্বদা তোমার সঙ্গী থাকবে।
আল্লাহ আমাদের হককে হক হিসাবে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন। আমীন।
———————————————
মুফতি লুৎফুর রাহমান ফরায়েজী
mim miftah@facebook